রাজনীতি

রাসেলের ইচ্ছা ছিল সেনা অফিসার হবে: প্রধানমন্ত্রী

ছোট্ট শিশু রাসেলও পাকিস্তানের বন্দিখানার ভেতরে বন্দি ছিল। এরপর থেকে তার ভেতরে একটি আকাঙ্ক্ষা জাগে সেও একদিন আর্মি হবে।

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ যখন হানাদার বাহিনী আমাদের দেশে গণহত্যা শুরু করে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। ২৬ মার্চ সে ঘোষণা সমগ্র বাংলাদেশে প্রচার করা হয়। এরপরই তাকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে আমার মা আমার ছোট ভাই জামাল, রেহানা এবং ৬ বছরের শিশু ছোট্ট রাসেলসহ আমরা সবাই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হই। ধানমন্ডি ১৮ নম্বর রোড, বর্তমানে ৯ নম্বরের ২৬ নম্বর একতলা একটি বাড়িতে আমাদের বন্দি করে রাখে।

সেখান থেকে গেরিলা কায়দায় বেরিয়ে জামাল মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করে। কামাল আগেই মুক্তিযুদ্ধে চলে যায়। ছোট্ট শিশু রাসেলও পাকিস্তানের বন্দিখানার ভেতরে বন্দি ছিল। এরপর থেকে তার ভেতরে একটি আকাঙ্ক্ষা জাগে সেও একদিন আর্মি হবে। মুক্তিযুদ্ধ থেকে জামাল-কামাল যখন ফিরে আসে তখন দেখে সে আরও উদ্বুদ্ধ হয়। তার ভেতরে এটাই একটা আকাঙ্ক্ষা ছিল। কেউ জিজ্ঞাসা করলে বলতো, আমি আর্মিতে যোগ দেবো। আমি সেনা অফিসার হবো কিন্তু দুর্ভাগ্য, তার সে স্বপ্ন পূরণ হয়নি—বলেন প্রধানমন্ত্রী।আজ মঙ্গলবার সকালে শরীয়তপুরের জাজিরায় শেখ রাসেল সেনা নিবাসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ এক দিকে যেমন গড়ে তুলেছিলেন। স্বাধীনতা রক্ষার সমস্ত প্রতিষ্ঠাগুলো তিনি গোড়ে তোলেন। অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের সেনা বাহিনীকেও তিনি গড়ে তুলেছিলেন। জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতিমালা, ১৯৭৪ ‍তিনি প্রণয়ন করেন। সেই সঙ্গে সেনা বাহিনীর জন্য মিলিটারি একাডেমি, কম্বাইন্ড আর্মড স্কুলসহ প্রায় ১০০টার মতো ইউনিট ও প্রতিষ্ঠান তিনি তৈরি করে দিয়ে যান।তিনি আরও বলেন, ৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর সেনা বাহিনীতে যে অস্থিরতা ছিল, ১৯-২০টা ক্যু হয়। বহু সেনা অফিসার, বিমান বাহিনীর অফিসার-সৈনিককে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ২১ বছর পরে আওয়ামী লীগ সরকার আসে। আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর আমাদের লক্ষ্য থাকে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতীক সশস্ত্র বাহিনীকে আরও যুগপোযোগী করতে হবে, প্রশিক্ষিত করতে হবে, উন্নত করতে হবে এবং সমৃদ্ধশালী করতে হবে। সেই সঙ্গে উন্নয়নের পদক্ষেপ আমাদের নিতে হবে।এ সময় আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উন্নয়নমূলক উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সব সময় চেয়েছি বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। সব দিক থেকে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি সদস্য উপযুক্ত হয়ে গড়ে ওঠে সেটাই আমার লক্ষ্য ছিল।

দক্ষিণ অঞ্চলের উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি যখন সরকারে আসি এবং জাপানে যাই, তখন জাপান সরকারের সঙ্গে আমার কথা হয়। আমি তাদের কাছে দুটি সেতু—পদ্মা ও রূপসা সেতু নির্মাণের জন্য অনুরোধ জানাই এবং তারা তাতে রাজি হয়। ফিজিবিলিটি স্টাডি করে এবং আমি পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করি ২০০১ সালে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, ২০০১ সালে বিএনপি জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর তা বন্ধ করে দেয়। তার সেখান থেকে পদ্মা সেতু অন্য দিকে সরিয়ে নিতে চায়।দ্বিতীয়বার সরকারে আসার পর আমারা উদ্যোগ নিই কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক এর অর্থ বন্ধ করে দেয় একটা মিথ্যা অপবাদ দিয়ে যে দুর্নীতি হয়েছে। সেটা আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করি এবং তাদের বলি এটা প্রমাণ করতে হবে। তারা তা প্রমাণ করতে পারেনি। মামলা হয় এবং এটাই রায় হয় যে, কোনো দুর্নীতি হয়নি বা দুর্নীতির কোনো সম্ভাবনাও ছিল না। আমি সিদ্ধান্ত নিই কারো অর্থ না। যেহেতু মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে এর জবাব আমরা দেবো। পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে করবো। এটা একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। অনেকে ভেবেছিল এটা আমরা করতে পারবো না কিন্তু আমি জানি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তার ৭ মার্চের ভাষণে যে কথাটা বলে গেছেন বাঙালিদের সম্পর্কে, কেউ দাবায়া রাখতে পারবা না। বাঙালিদের কেউ দাবায়া রাখতে পারে না, পারবে না। আমরা যদি ইচ্ছা করি, অসাধ্য সাধন করতে পারি। ৯ মাসে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করে তা প্রমাণ করেছি। আজ পদ্মা সেতু আমরা নির্মাণ করেছি। তার কাজও প্রায় সম্পন্ন, বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমি জাতির কাছে কৃতজ্ঞ, তাদের সাহসী ভূমিকা এবং তাদের সমর্থন পেয়েছি বলেই এটা করা সম্ভব হয়েছে। তা ছাড়া, আন্তর্জাতিক বন্ধুপ্রতীম দেশও আমাদের সমর্থন দিয়েছে। শুধু নির্মাণ না, এর নিরাপত্তা বিধানও আমাদের একান্তভাবে প্রয়োজন। আর সেই নিরাপত্তা বিধানের জন্য আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। এই সেতু নির্মাণে মধ্য দিয়ে আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থারই শুধু উন্নতি হবে না, সঙ্গে সঙ্গে আর্থ-সামাজিক উন্নতিও হবে। আজ আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ দিতে পেরেছি। প্রতিটি গৃহহারা মানুষকে ঘর তৈরি করে দিচ্ছি। সেটাও আমরা সেনা বাহিনীকে দিয়ে করিয়েছিলাম। পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও জলবায়ু অভিঘাত থেকে আমাদের দক্ষিণ অঞ্চল থেকে রক্ষা করার জন্য ওই অঞ্চলের উন্নয়নটা একান্তভাবে দরকার।আমরা চাই আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে। আরও উন্নত হবে। আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে যে কোনো হুমকি; আমরা কারো সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই না। যুদ্ধ আমরা করবো না। জাতির পিতা আমাদের যে পররাষ্ট্রনীতি শিখিয়ে গেছেন, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়। আমরা সেই নীতিতে বিশ্বাস করি কিন্তু আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। কখনো যদি বহিঃশত্রুর আক্রমণ হয়, আমরা যেন তা যথাযথভাবে প্রতিরোধ করতে পারি। আমরা যেন দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে পারি। সেভাবেই আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে আমি প্রশিক্ষিত, সমৃদ্ধশালী করার পদক্ষেপ নিয়েছি। আমি মনে করি, আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর প্রজ্ঞা, পেশাগত দক্ষতা এবং নিষ্ঠা আমাদের দেশের সুনাম উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করবে—বলেন তিনি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button