অন্যান্য সংবাদ

একজন ভিশনারি ও ডায়নামিক বিচারক তাজুল ইসলাম।

আসাদুজ্জামান আসাদ

সিনিয়র স্টাফ রির্পোটারঃ

 

বিচারপ্রার্থী মানুষকে অতি দ্রুত ন্যায়বিচার দিয়ে মামলা-মোকদ্দমা নিষ্পত্তি করে বেশ ক’বছর ধরেই আলোচনায় বিচারক মো. তাজুল ইসলাম। বর্তমানে তিনি যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ। ইতোপূর্বে এ বিচারক যে আদালতেই দায়িত্বে ছিলেন সেখানেই দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। মামলাজট কমাতে সক্ষম হয়েছেন।

 

যশোরে বদলির আগে তাজুল ইসলাম ছিলেন কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ। সেখানে ২০২২ সালে ৫৫টি হত্যা মামলা নিষ্পত্তি করে তিনি রেকর্ড গড়েন। এটি সারাদেশের সকল দায়রা জজ আদালতের মধ্যে এক বছরে সর্বাধিক হত্যা মামলা নিষ্পত্তি বলে জানিয়েছের সংশ্লিষ্টরা।

 

২০০৮ সালে সহকারি জজ হিসেবে বিচারকের কর্মজীবন শুরু করা তাজুল ইসলাম স্বপ্ন দেখেন মামলাজট মুক্ত বিচার বিভাগ। স্বপ্ন দেখেন কিভাবে বিচারপ্রার্থী জনগণকে অতিদ্রুত ন্যায়বিচার দিয়ে মামলা নিষ্পত্তি করা যায়।

 

তাঁর বিচারিক কাজ দেখেছেন এমন ব্যক্তিদের ভাষ্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে নিজের দায়িত্ব অত্যন্ত সুচারুরূপে আইনানুযায়ী পালনে সদাসচেষ্ট বিচারক তাজুল ইসলাম।

 

আদালতে দ্রুত মামলা নিস্পত্তিতে নিরলস কাজ করে চলার তিনি অনলাইন প্লাটফর্মে গড়ে তুলেছেন ‘আইনী পাঠশালা’ নামের স্যোশাল মিডিয়া গ্রুপ। সেখানে ভার্চুয়ালি আইনের ছাত্র ও আইনজীবীদের এবং সাধারণ জনগণের মাঝে নিয়মিত আইনের বিভিন্ন নিত্যনৈমিত্তিক সমস্যা নিয়ে লেখালেখি ও আলোচনা করে থাকেন।

 

তাজুল ইসলাম তাঁর লেখনির মাধ্যমে মামলাজট ও ন্যায়বিচার প্রদানের স্বপ্নের বীজ বুনে দেন হাজারো আইন শিক্ষার্থীর মনোজগতে। মানুষকে আইন বিষয়ে সচেতন করার লক্ষে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।

 

উদার, মানবিক ও অত্যন্ত সরল জীবন-যাপনকারী মো. তাজুল ইসলাম তারুণ্য এবং বিজ্ঞতার মিশেলে একজন চমৎকার গুণী মানুষও। তাঁর সততা, দেশপ্রেম, পরিশ্রম ও দ্রুত মামলা নিস্পত্তিতে তার উচ্চ মানসিকতা দেশের ৩৭ লাখ মামলাজটের মধ্যে কিছুটা আশার আলো হিসেবে প্রতিভাত হয়।

 

কুষ্টিয়া আদালত ও দেশের অন্যান্য যেসব জেলার আদালতে তিনি বিচারন কাজ করেছেন এবং পুরনো দায়রা ও দেওয়ানি মামলা কিভাবে দ্রুত নিষ্পত্তি করেছেন তা এককথায় অসামান্য।

 

কুষ্টিয়া আদালতে কর্মকালীন সময় তাজুল ইসলামের কাজের অগ্রগতি বিভিন্ন সময়ে পত্রপত্রিকায় সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। বিশেষ করে ২০২২ সালে ৫৫টি হত্যা মামলা নিষ্পত্তি করে তিনি আলোচনায় আসেন।

 

এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে পাঁচটি, ফেব্রুয়ারি মাসে দুটি, মার্চ মাসে সাতটি, এপ্রিল মাসে তিনটি, মে মাসে পাঁচ টি, জুনে ছয়টি, জুলাই চারটি, আগস্ট আটটি, সেপ্টেম্বর চারটি, অক্টোবর পাঁচটি এবং নভেম্বর মাসে ছয়টি তিনি নিষ্পত্তি করেন।

 

এছাড়া তাজুল ইসলাম কুষ্টিয়ার আদালতে তার কর্মকাল এক বছর চার মাসে মোট ৭০টি অর্থাৎ প্রতি মাসে পাঁচটি করে হত্যা মামলা নিষ্পত্তি করেন। একমাসে পাঁচটি হত্যা মামলার রায় দেওয়া প্রায় অসম্ভব বলে মনে করেন বিচার সংশ্লিষ্টরা।

 

শুধু হত্যা মামলাই নয় অন্যান্য সেশন মামলা যেমন, ডাকাতি, অস্ত্র এবং মাদক মামলা নিষ্পত্তিতেও এগিয়ে রয়েছেন এই বিচারক। এছাড়া এই বিচারক এগিয়ে রয়েছেন দেওয়ানি আদালতের আপিল মোকদ্দমা নিষ্পত্তিতেও। দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করে তিনি বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরিয়ে আনেন। ব্যাপক জনপ্রিয় হন বিচারক তাজুল ইসলাম।

 

দেশের সিংহভাগ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলাজট রয়েছে। এক্ষেত্রে মেধা, বিচক্ষণতা, দক্ষতা, আন্তরিক মানসিকতা আর কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে বিচারক তাজুল ইসলাম দায়িত্বপ্রাপ্ত আদালতে মামলাজট কমিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হয়েছেন। তার এ দৃষ্টান্ত অন্য বিচারকরা অনুসরণ করলে বিচার বিভাগ থেকে মামলার জট নিরসন হবে বলেই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

 

জানা যায়, কুষ্টিয়া আদালতে বিচারক মো. তাজুল ইসলাম প্রায় সাড়ে সাত শতাধিক পুরোনো মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় যুক্ত হন। দায়িত্ব নেওয়ার পর হাজারের অধিক মামলা নিষ্পত্তি করেন। এর মধ্যে হত্যা মামলা ৭২টি, অস্ত্র ও ডাকাতি মামলা দুই শতাধিক, ফৌজদারি আপিল ৩৫০টির অধিক, দেওয়ানি আপিল ৩০০টি এবং শতাধিক রিভিশন মামলা নিষ্পত্তি করেছেন। যেগুলো ১০ বছর বা ১৫ বছরের অধিক পুরোনো মামলা। তিনি পুরোনো মামলাগুলো অগ্রাধিকার দিয়ে নিষ্পত্তি করেছেন। এসময় তাকে প্রায় দেড় হাজার বা তার অধিক সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করতে হয়েছে।

 

কুষ্টিয়ার আগে তিনি খুলনা, ঢাকা, মেহেরপুর, ঠাকুরগাঁও ও ঝিনাইদহ আদালতে বিচারক হিসেবে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির মাধ্যমে মামলা জট নিরসনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।

 

২০০৮ সালের ২২ মে খুলনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সহকারী জজ হিসেবে তিন বছর ছিলেন। এক বছর এক মাস পারিবারিক আদালতে ছিলেন। সেখানে সাড়ে তিন হাজার মামলা ছিল। এক বছর এক মাসে ১৮০০ মামলা নিষ্পত্তি করে রেকর্ড করেছিলেন।

 

এরপর ঢাকা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে চার বছর ছিলেন। সেখানে প্রতি মাসে ৪০-৫০টি দো-তরফা মামলা নিষ্পত্তি করেছেন। পরে যুগ্ম জেলা জজ হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতে এক বছর ৮ মাসে দেওয়ানি, মাদক, অস্ত্রসহ ১০০০ মামলা নিষ্পত্তি করেছেন।

 

এরপর মেহেরপুর জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতে ২০১৭ এপ্রিল থেকে ২০১৮ নভেম্বর পর্যন্ত এক বছরে সাড়ে ৩০০ দায়রা মামলা নিষ্পত্তি করেন। ২০১৮ সালের ২৫ নভেম্বর ঝিনাইদহ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের যুগ্ম জেলা জজ (ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল) হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে করোনাকালীন এক বছর ৯ মাসে ২২০০ মামলা নিষ্পত্তি করে রেকর্ড সৃষ্টি করেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button