অন্যান্য সংবাদ

খুলনার পাইকগাছায় অবৈধ চুল্লিতে কয়লার উৎপাদন, হুমকিতে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র।

বি.সরকার :

পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি :

 

খুলনার পাইকগাছায় অবৈধ চুল্লিতে কয়লার উৎপাদন করতে হুমকিতে এখন এলাকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র।  টিন, গোলপাতা, ইটের পাকা দেয়াল বা কাঠের তক্তা দিয়ে ঘিরে রাখা সাদা রঙের ছোট ছোট ঢিবি।

দেখতে সুন্দর হলেও মাটি, ইট ও কাঠের গুঁড়া দিয়ে বানানো এসব ঢিবি মূলতঃ বন উজারের মাধ্যম। স্থানীয়রা এটিকে চুলা বা চুল্লি বলেই চেনে। নির্বিচারে কেঁটে আনা শত শত টন গাছ এসব চুল্লিতে পুড়িয়ে বানানো হচ্ছে কয়লা। আর এ চুল্লি থেকে নির্গত ধুয়ার কুণ্ডলী দূষণ ছড়াচ্ছে পরিবেশে। পাশাপাশি হুমকিতে পড়ছে জনজীবন ও জীববৈচিত্র। অনেক পশু-পাখি এসব চুল্লির পরিবেশ দূষণে মারা যাচ্ছে। অবৈধ এসব চুল্লির মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রতিবাদ করার সাহস পায় না কেউই।

 

অনেকের কাছে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরির এমন প্রক্রিয়া নতুন মনে হলেও এসব এলাকার বাসিন্দাদের কাছে পুরোনো। এসব চুল্লিতে বছরের পর বছর টনকে টন গাছ কেঁটে পোড়ানো হলেও প্রতিবাদ করার সাহস নেই কারও। প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় এইসব বনভূমি উজারকারীরা দিনের পর দিন হয়ে উঠছেন বেপরোয়া।

 

খুলনার পাইকগাছা উপজেলার চাঁদখালী ইউনিয়নের চাঁদখালী বাজারের দক্ষিণ দিকে একটু এগিয়ে ওয়াপদা রাস্তার পাশদিয়ে কপোতাক্ষ নদের চরভরাটি এলাকায় গিয়ে প্রকাশ্যে অবাধে বনের কাঠ পোড়ানোর এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। এ এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সেখানে গড়ে তুলেছেন এসব মাটি, ইট ও কাঠের গুঁড়া দিয়ে বানানো মূলত বন উজারের মাধ্যম অবৈধ কয়লা তৈরির চুল্লি। নির্বিচারে বৃক্ষনিধন ও কয়লা উৎপাদনের মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে গাছ পুড়িয়ে উৎপাদিত হচ্ছে কয়লা।

 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় শত শত গাছের ডাল-পালা ও গুঁড়ি পাশে জ্বলছে বড় বড় চুল্লিতে গাছ পুড়িয়ে কয়লা তৈরীর কাজ। লোকালয়ে, বসত বাড়ির সন্নিকটে এই সব কয়লা কারখানায়, বিভিন্ন গাছ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে গাছের গুঁড়ি সংগ্রহ করে প্রতি চুল্লিতে ২২০-২৩০ মণ গাছের গুঁড়ি ৯ থেকে ১০ দিন পুড়িয়ে প্রায় অর্ধ শতাধিক চুল্লিতে উৎপাদিত হচ্ছে কয়লা। এসব অবৈধ চুল্লিতে গাছ পুড়িয়ে কয়লা তৈরির সময় নির্গত ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষনের পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমিও।

 

এতে বৃক্ষনিধন তো হচ্ছেই, সাথে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। ফলে পড়তে হচ্ছে বিভিন্ন শ্বাস কষ্টসহ নানান স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। তাই শ্বাসকষ্টসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন আশপাশের লোকালয়ের বাসিন্দারা। আইনের ব্যবহার না থাকায় যত্রতত্র গড়ে উঠেছে এই সব অবৈধ কয়লা কারখানা, বৈধ কোনো কাগজ পত্র না থাকায় সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব, সৃষ্টি হচ্ছে পরিবেশের বিপর্যয়। এছাড়া সেখানে এইসব অবৈধ চুল্লির পাশাপাশি কয়েক ব্যক্তি মাদক ব্যবসার সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে বলে একাধিক সুত্রে জানা গেছে। তবে এলাকাবাসী দ্রুত এসব অবৈধ কারখানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি আহ্ববান জানিয়েছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button