সওম কী চরিত্র দান করে?
.
মানুষের নফস ভোগবাদী, সে চায় দুনিয়ার সম্পদ ও ইন্দ্রিয়সুখ ভোগ করতে। পক্ষান্তরে সওমের শিক্ষা হচ্ছে ত্যাগ করা, সংযত থাকা, নিজের ভোগবাদী প্রবণতার মুখে লাগাম দেওয়া। মানবতার কল্যাণে কাজ করা, সত্যদীন প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করা হচ্ছে ত্যাগের বিষয়, যা ভোগের ঠিক উল্টো। এটা করতে নিজেদের জান ও মালকে উৎসর্গ করতে হয়। ত্যাগ করার জন্য চারিত্রিক শক্তি, মানসিক বৈশিষ্ট্য অর্জন করতে হয়।
মো’মেন সারা বছর খাবে পরিমিতভাবে যেভাবে আল্লাহর রসুল দেখিয়ে দিয়ে গেছেন এবং সে অপচয় করবে না, পশুর মতো উদরপূর্তি করবে না। সেখানে একটি নিয়ন্ত্রণ থাকবে। কিন্তু বছরে এক মাস দিনের বেলা নির্দিষ্ট সময়ে সে খাবে না, জৈবিক চাহিদা পূর্ণ করবে না অর্থাৎ নিজের ইন্দ্রিয়কে নিয়ন্ত্রণ করবে, ফলে আত্মা শক্তিশালী হবে, আল্লাহর হুকুম মানার ক্ষেত্রে সে সজাগ হবে। এটা করতে গিয়ে আল্লাহর হুকুম মানার জন্য তার যে শারীরিক কষ্ট, মানসিক কষ্ট সহ্য করার মানসিকতা তৈরি হবে এটা তার জাতীয়, সামষ্টিক ও সামাজিক জীবনে প্রতিফলিত হবে। আল্লাহর হুকুম মানার ক্ষেত্রে কষ্টদায়ক হলেও সে ভোগবাদী হবে না, পিশাচে পরিণত হবে না, সে নিয়ন্ত্রিত হবে, ত্যাগী হবে। সে আল্লাহর হুকুম অমান্যকারী হবে না, মান্যকারী হবে।
তার ত্যাগের প্রভাবটা পড়বে তার সমাজে। ফলে এমন একটি সমাজ গড়ে উঠবে যেখানে সবাই একে অপরের জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে উৎসাহী, নিজে না খেয়ে অন্যকে খাওয়াতে আগ্রহী হবে। তাদের মধ্যে বিরাজ করবে সহযোগিতা, সহমর্মিতা। অর্থাৎ বোঝা যাচ্ছে সওমের মূল উদ্দেশ্যটাই হলো আত্মসংযম, আত্মনিয়ন্ত্রণ। আমরা যদি সালাহকে (নামাজ) সামষ্টিক (Collective) প্রশিক্ষণ মনে করি তাহলে সওম অনেকটা ব্যক্তিগত (Individual) প্রশিক্ষণ। এখন প্রশ্ন হলো, আমাদের সমাজে অধিকাংশ মুসলিমই সওম রাখছেন। কিন্তু সওমের যে শিক্ষা তা আমাদের সমাজে কতটুকু প্রতিফলিত হলো। আমরা যদি পৃথিবীতে শুধু মুসলমানদেরকে হিসাবের মধ্যে ধরি যারা আল্লাহ রাসুলকে বিশ্বাস করেন, কেতাব বিশ্বাস করেন, হাশর বিশ্বাস করেন এমন মুসলমান ১৬০ কোটির কম হবে না।
আমরা দেখি রোজা যখন আসে মুসলিম বিশ্বে খুব হুলুস্থুল পড়ে যায়। ব্যাপক প্রস্তুতি চলতে থাকে ঘরে ঘরে। রেডিও টেলিভিশনে অনুষ্ঠান প্রচারিত হতে থাকে। ইসলামী চিন্তাবিদরা বড় বড় আর্টিকেল লিখতে থাকেন। বিভিন্ন ধরনের কলাম লেখা শুরু হয়। সওমের গুরুত্ব, মাহাত্ম্য, ইফতারের গুরুত্ব, সেহেরির গুরুত্ব। আবার কেউ কেউ সওয়াবের জন্য রাত জেগে সেহেরির জন্য মানুষকে জাগিয়ে থাকেন। কিন্তু আমাদের সওমটা সঠিক হচ্ছে কিনা, সেটা আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার শর্তাবলী পূরন হচ্ছে কি হচ্ছে না এই ব্যাপারে আমাদেরকে অবশ্যই ভাবতে হবে।