কলারোয়া

কলারোয়ায় ক্ষণগণনা শেষে ঢাকে কাঠি, দেবীর বোধনে দুর্গোৎসব শুরু।

মোঃ রাসেল হোসেন,

বিশেষ প্রতিনিধ:

 

মহালয়া থেকে ক্ষণগণনার অপেক্ষা ফুরালো। আজ ষষ্ঠী। দেবীর বোধন। বোধনের পর দেবীর অধিবাস। বেল তলায় দেবীর আরাধনা। গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী, সরস্বতী- সপরিবারে একরাত সেখানেই থাকবেন মা দুর্গা। সপ্তমীর সকালে পা দেবেন বাপের বাড়িতে।

 

শুক্রবার (২০ অক্টোবর) সকালে ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হলো বাঙালি সনাতন ধর্মের মানুষদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গোৎসবের। তবে দেবী এবার শরৎ নয়, এলেন হেমন্তে। এবার মর্তে তার আগমন ঘোড়ায়, কৈলাসে ফিরবেনও ঘোড়া চড়ে।

 

দেবীর বোধন: পুরাণ মতে, সূর্যের উত্তরায়ণ হচ্ছে দেবতাদের দিন। সূর্যের এই গমনে সময় লাগে ছয় মাস। এই ছয় মাস দেবতাদের একদিনের সমান। আর দিনের বেলায় দেবতারা জেগে থাকেন। তাই শাস্ত্র মতে দিনেই দেবতাদের পূজা করা হয়।

 

আবার সূর্যের দক্ষিণায়ন হলো দেবতাদের রাত। সূর্যের এই গমনকালে ছয় মাসকে দেবতাদের এক রাত ধরা হয়। আর রাতে দেবতারা পূজার জন্য ‘অকাল’। কিন্তু দেবীর পূজা করতে হলে তো তার বোধন অর্থাৎ জাগরিত করতে হবে।

 

তবে রামচন্দ্রের আগে প্রথম আদ্যাশক্তি মহামায়ার পূজা করেছিলেন রাজর্ষি ওঠ। আর তার সঙ্গী ছিলেন সমাধি বৈশ্য। সেই পূজাকে আমরা বর্তমানে বাসন্তী পূজা নামে জানি।

 

অকাল বোধন: মহাদেবের বর পেয়েছিলেন রাবণ। আর দেবী দুর্গা বিভিন্ন রূপের একনিষ্ঠ সাধকও ছিলেন। মহাদেবে। কিন্তু রামের হাতে রাবণের বধ ছিল দৈববাণী।

 

তাই রাম-রাবণের যুদ্ধ তখন অবশ্যম্ভাবী সেই সময় প্রজাপতি ব্রহ্মার দ্বারস্থ হলেন দেবতারা।

 

কিন্তু দেবী তখন নিদ্রিতা। দেবতাদের অনুরোধে স্বয়ং ব্রহ্মা দেবীর পূজা করে তাকে তুষ্ট করার উপায় জিজ্ঞাসা করলেন। দেবী বললেন, যদি রামচন্দ্র তার বোধন করেন, তবেই তিনি রাবণ বধে তাকে সাহায্য করবেন। রামচন্দ্র লঙ্কা অভিযানের আগে তাই করেছিলেন। সেজন্যই বিশেষ করে শরৎকালের এই দুর্গা পূজা অকাল বোধন নামেও পরিচিত।

 

বেল গাছের নিচে কেন একদিন থাকবেন দুর্গা রামকে দেবীর নির্দেশের কথা জানিয়ে দেন প্রজাপতি ব্রহ্মা ও দেবরাজ ইন্দ্র। যেহেতু সময়টা ছিল শরৎকাল, তাই রামচন্দ্র নিজ হাতে দেবীর মূর্তি গড়ে তার আরাধনার প্রস্তুতি নিলেন। সেই সময় ধ্যানে বসে ব্রহ্মা দেখলেন বেল গাছের নিচে একটি ৮-১০ বছরের বালিকা খেলা করছে। ব্রহ্মা বুঝলেন তিনি দেবী।

 

তারপরেই প্রজাপতি স্থির করলেন দেবীর বোধনের পুজো হবে ওই বেল গাছের নিচেই। সেই কারণে প্রথা মেনে আজও বোধনের আগে বেল গাছের পূজা করে তা প্রতিষ্ঠিত করা হয় দেবীর ঘটে। তারপরেই শুরু হয় বোধন, শুরু হয় দেবীর আরাধনা।

 

ইতিমধ্যে ষষ্ঠীর সকাল থেকেই শুরু হয়েছে ঠাকুর দেখা, নতুন জামা, নতুন জুতো পড়ে হৈ-হুল্লোড়, খাওয়া-দাওয়া। বাড়ির পুজোগুলোর সাবেকিয়ানা, বারোয়ারীর নান্দনিকতায় মিলে-মিশে রঙিন উদযাপন শুরু হয়েছে। দেশের পাড়ায় পাড়ায়। আর এখন চলছে একেবারে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। বিশেষ করে বারোয়ারি মণ্ডপগুলোতে দম ফেলার সময় নেই প্রতিমার কারিগরসহ সাজসজ্জার কাজ করা মানুষগুলোর।

 

গ্রীষ্মের অভিঘাত, বর্ষার দুঃস্বপ্ন ঠেলে শরতের শুদ্ধ স্পর্শ নিয়ে আনন্দময়ী এখন ধরণীতে। তার আগমনে জীবনের সব হতশ্রী দূর হোক। আর দুর্গোৎসবের স্মৃতিগুলো ঝরে পড়ুক শিউলি আর ছাতিম হয়ে।

 

দুর্গোৎসব মূলত পাঁচ দিনের হলেও এর শেষ হয় কোজাগরি লক্ষ্মীপূজায় গিয়ে। টানা এই লম্বা সময় নানা আনন্দ, উপাচারে মেতে থাকেন সনাতনীরা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button