অন্যান্য সংবাদ

কেউ খুশি হয়ে কিছুদিলে আমি নেই – ইন্সট্রাকটর কামরুজ্জামান।

সানজিদ মাহমুদ সুজন,

নিজস্ব প্রতিবেদক :

 

শরীয়তপুর নড়িয়া উপজেলার রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর মো. কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী শিক্ষকদের প্রাপ্য সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে অনৈতিকভাবে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন এমনি মৌখিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। চতুর্থ প্রাথমিক উন্নয়ন কর্মসূচির (পিডিবি-৪) আওতায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরাদেশের ন্যায় নড়িয়া উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে ৩ দিনব্যাপী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শিক্ষাক্রম বিস্তারণ প্রশিক্ষণটি গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়েছে।

 

এই প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য সরকারি বরাদ্দ থেকে মোটা অংকের টাকা বাঁচিয়ে নিম্নমানের প্রশিক্ষণ উপকরণ প্রদানসহ নানাভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন ইন্সট্রাক্টর মো. কামরুজ্জামান। নড়িয়া উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে প্রতিব্যাচে ৩০ জন করে ২২টি ব্যাচে মোট ৬৬০ জন শিক্ষককে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য তথ্যপত্র, কলম, প্যাড, নেমকার্ড, পেন্সিল, ইরেজার-এর জন্য বরাদ্দ ৫০০ টাকা এবং প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীর ব্যাগ বাবদ বরাদ্দ রয়েছে ৫০০ টাকা। দিনপ্রতি সম্মানী ৫০০ টাকা ও লান্স বাবদ বরাদ্দ আছে ২৮০ টাকা। প্রশিক্ষণার্থীদের যে তথ্যপত্র সরবরাহ করা হয়েছে তার সর্বোচ্চ মূল্য ১২০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা।

 

এছাড়া ৫ টাকা মূল্যের একটি কলম, ৩ টাকা মূল্যের একটি নেমকার্ড, ১৫ থেকে ২০ টাকা মূল্যের একটি খাতা প্রদান করা হয়েছে। ৫০০ টাকা মূল্যমানের ব্যাগ সরবরাহের কথা থাকলেও যে ব্যাগটি প্রদান করা হয়েছে তার সর্বোচ্চ বাজারমূল্য ২৫০ টাকা। এসব খাতে প্রতি প্রশিক্ষণার্থীর জন্য এক হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও ব্যয় করা হচ্ছে ৩৫০-৪০০ টাকা। ভ্যাট ও ট্যাক্স বাবদ প্রতি প্রশিক্ষণার্থীর নিকট থেকে ৯০ টাকা নিয়ে সরকারকে প্রদান করছেন ২৪ টাকা। তথ্যপত্র বইয়ের ফটোকপি বিল বেশি দেখানো হচ্ছে। এমনকি ৩ দিনের প্রশিক্ষণ শেষে যে সনদপত্রটি প্রদান করা হচ্ছে তার কাগজও মানসম্মত নয়।

 

 

ইতোমধ্যে ৪টি ব্যাচের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। এভাবে ৩০টি ব্যাচে মোট ৯০০ জন প্রশিক্ষণার্থীর নিকট থেকে তিনি সাড়ে ১২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার পায়তারা চালাচ্ছেন। এছাড়াও ইন্সট্রাক্টর মো. একই সাথে কোর্স কো-অর্ডিনেটর হিসেবে দায়িত্বে আছেন, অপরদিকে তিনি প্রশিক্ষকের দায়িত্বও পালন করে দুইদিক থেকে সম্মানী গ্রহণ করছেন বলে জানা গেছে। তার এমন কর্মকান্ডে ভুক্তভোগী শিক্ষকদের মাঝে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
নাম না প্রকাশে কয়েকজন শিক্ষক জানান, আমাদের প্রশিক্ষণে যে উপকরণ দেওয়ার কথা ছিলো, সে উপকরণ দিচ্ছে না। নিম্ন মানের উপকরণ আর ব্যাগ দিয়েছে। এছাড়াও প্রশিক্ষণের সম্মানী ভাতা থেকে ২০০ করে টাকা কেটে রাখছে ইন্সট্রাক্টর স্যার। এটা একটা দুর্নীতি। এই অনিয়ম আর দুর্নীতি বন্ধ হওয়া দরকার।

 

 

সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার কাজী ছানোয়ার হোসেন জানান, সে প্রশিক্ষকের ভাতা নিলেও সে কোন প্রশিক্ষণ দিচ্ছে না। দু’জন শিক্ষকের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা, তবে সে প্রশিক্ষণ না দেওয়ায় একজন শিক্ষককে সারাদিন প্রশিক্ষণ দিতে হচ্ছে। এতে আমাদের খুব কষ্ট হয়ে যায়। আর সে প্রশিক্ষণ না দিয়ে যে ভাতা নিচ্ছে এটা সম্পূর্ণ অনিয়ম।

 

 

নড়িয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার শাহ মো. ইকবাল মনসুর জানান, রিসোর্স সেন্টারের যে কার্যক্রম গুলো করা হচ্ছে সেটা সম্পূর্ণ’ই অনিয়ম। যে উপকরণ দেয়া হচ্ছে সেটা খুবই নিম্নমানের। শিক্ষকদের সম্মানীভাতা থেকেও সে ভাগ বসিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সে নিয়মের বাহিরে গিয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। একজন ট্রেইনার এক ট্রেনিং দিলে পরের দিতে পারে না, তবে সে পর পর পাঁচ ব্যাচের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এ সময় তিনি আরও জানান, তার বিরুদ্ধে অনেক শিক্ষক আমার কাছে মৌখিক অভিযোগ দিয়েছে।

 

 

নড়িয়া রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর মো. কামরুজ্জামান টাকা নেওয়ার কথা শিকার করলেও, তিনি বলেছেন যদি কেউ খুশি হয়ে দেন তাহলে নেন। কারও কাজ থেকে জোরকরে নেওয়া হয় না। নিম্নমানের উপকরণের বিষয় তিনি সঠিক জবাব দিতে পারেনি।

 

 

শরীয়তপুর জেলা পিটিআই এর সুপারিনটেনডেন্ট ড. মো. রবিউল ইসলাম মুটোফোনে জানান, শিক্ষকরা অফিযোগ করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ সময় তিনি সত্যতা স্বীকার করে বলেন সারা বাংলাদেশে এ কার্যক্রম হচ্ছে। এক অফিস এক অফিসার তাই তারা এমন কাজ গুলো করে থাকে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button