শরীয়তপুরে মক্কেলকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিলেন চেম্বার থেকে।
সুজন হাওলাদার :
শরীয়তপুর প্রতিনিধি :
মামলার জামিন করিয়ে দিবেন বলে কন্টাক্টে টাকা নিয়ে কথা অনুযায়ী কাজ করেননি উকিল। বিষয়টি বিষয়টি নিয়ে বাদী অসন্তোষ প্রকাশ করলে আইনজীবী তার চেম্বার থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছেন মক্কেলকে। একটি মামলার আসামীর বাবা ও চাচা এমন অভিযোগ করেছেন শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে। মামলার বিবাদীরা খুলনা ও বরিশাল জেলার বাসিন্দা হওয়ায় শরীয়তপুরে কোনো আত্মীয় স্বজন না থাকায় বিষয়টি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১১ মে) দুপুরে শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতি ভবনের দ্বিতীয় তলার ২১৬ নম্বর কক্ষে এঘটনা ঘটেছে। আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ায় ভীত হয়ে পড়েছেন জামিন না হওয়া আবুল বাশার হৃদয় ও সাকিব হাসান অনিকের স্বজনরা। সন্ধ্যার দিকে তাদেরকে দেখা গেছে বিমর্ষ অবস্থায় রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন।
জানা যায়, ২০২১ সালে শরীয়তপুরে আবুল বাশার হৃদয় ও সাকিব হাসান অনিকের বিরুদ্ধে প্রতারণা মামলা হয়। কিন্তু তারা বিষয়টি জানতেন না। দুই সপ্তাহ আগে ওয়ারেন্টের নোটিশ পেয়ে আবুল বাশার হৃদয় ও তার বন্ধু সাকিব হাসান অনিকের পরিবার ভীত হয়ে পড়েন। শরীয়তপুরে পরিচিত কেউ না থাকায় জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামকে জানালে তিনি আসামী আবুল বাশার হৃদয়ের কাকা কাজী শফিকুল ইসলাম মন্টুকে বলেন, কন্টাক্টে ৫০ হাজার টাকা দিলে আবুল বাশার হৃদয় ও তার বন্ধু সাকিব হাসান অনিকের জামিন মঞ্জুর করাতে পারবেন। এরপর অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামের সাথে ৩৫ হাজার টাকায় কন্টাক্ট হলে নগদ ২৬ হাজার টাকা পরিশোধ করেন কাজী শফিকুল ইসলাম মন্টু। উকিলের পরামর্শ অনুযায়ী আবুল বাশার হৃদয় ও সাকিব হাসান অনিক আদালতে হাজির হলে আমলী আদালত গোসাইরহাট শরীয়তপুরের বিচারক তাদের জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। কন্টাক্টে টাকা নেওয়ার পরও কেন জামিন হলো না বিষয়টি জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীরা মক্কেল কাজী শফিকুল ইসলাম মন্টু ও বজলুর করীমকে ধাক্কা দিয়ে চেম্বার থেকে বের করে দেন।
আবুল বাশার হৃদয়ের বাবা বজলুর করীম বলেন, আমার ছেলেকে জামিন করাতে অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামকে কন্টাক্টে টাকা দিলেও তিনি জামিন করাতে পারেননি। আমরা ভীনদেশী মানুষ। এখানে কোনো আত্মীয় স্বজন নেই। ছেলে ও তার বন্ধুকে জেলে পাঠালো আদালত। তাদেরকে ঠিকমত থাকার মতো পোষাক ও খাবারও দিতে পারিনি টাকার জন্য। জামিন না হওয়াতে টাকা ফেরত চাওয়ায় উকিল সাহেব আমাদের লাঞ্চিত করেছেন। আমি এই ন্যাক্কার জনক ঘটনার বিচার দাবি করছি।
আবুল বাশার হৃদয়ের চাচা কাজী শফিকুল ইসলাম মন্টু বলেন, বাড়ি শরীয়তপুর জেলায় না হওয়াতে আমরা এখানে কারও পরিচিত নই। ভাতিজা সাকিব হাসান অনিকের স্ত্রী রশনি ইসলাম প্যাগনেন্ট। দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে তিনি মা হবেন। বাড়িতেও তেমন কেউ নেই। আমরা এখন ভাতিজার জামিনের ব্যবস্থা করব নাকি তার স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে যাবো বুঝতে পারছি না। উকিল সাহেব আমার সাথে ৩৫ হাজার টাকা কন্টাক্ট করেও ২ হাজার টাকা বেশি চেয়েছেন তার জুনিয়র আইনজীবীদের জন্য। আমি কষ্ট হলেও রাজি হয়েছি। এখন তিনি আমার ভাতিজাদের জামিন করাতে পারেননি। টাকা ফেরত চাওয়ায় লাঞ্চিত করে চেম্বার থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছেন। রাতে থাকবো কোথায় তা আমরা এখনও জানি না। আমরা প্রয়োজনে লিখিত অভিযোগ দেব। আপনাদের মাধ্যমে বিচার দাবি করছি।
জামিন না হওয়া আবুল বাশার হৃদয় ও সাকিব হাসান অনিক খুলনা জেলার খালিশপুরের বাসিন্দা।
এবিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, জামিন না হওয়াতে তারা অসন্তুষ্ট হয়েছেন। জামিন না হওয়া স্বাভাবিক বিষয়। ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।
জেলা আইনজীবী সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট কামরুল হাসান শাহ আলম বলেন, যদি কেউ আমার কাছে অভিযোগ করেন তাহলে তদন্ত করে সত্যতা পেলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমরা কেউ আইনের উর্ধ্বে নই।