শুভ নববর্ষ।
জাকারিয়া হোসেন :
একটা সার্বজনীন উতসবে কখনো নেতিবাচক বা আক্রমণাত্মক শ্লোগান বা শব্দমালা ব্যাবহার হয়না, ইতিবাচক বার্তা বা সকলের সমন্বিত অগ্রযাত্রাকে অগ্রাধিকার দেয়, ভালো-মন্দ সকলকে ধারণ করা শেখায়। আমি নিজে জার্মানির বন কার্ণিভালে অংশগ্রহণ করেছি, কখনো মনে হয়নি যে এটা ধর্ম বা সম্প্রদায়কে হেয় করছে। সাম্প্রদায়িক অপশক্তি’র সংজ্ঞা একটা রাজনৈতিক বিশেষণ।
ইসলাম বা হিন্দু ধর্মের অনুসারীরা তো শত শত বছর ধরে এ অঞ্চলে একত্রে বসবাস করছে, চৈত্র সংক্রান্তি ও নববর্ষ পালন করছে কোনো বিভেদ ছাড়াই। শুধু তাই নয়, বৈশাখী মেলা থেকে শিশুদের জন্য খেলার হাড়ি পাতিল, পুতুল কেনা হয়, তবে কখনো আমার চোখে পড়েনি যে, এটাকে কেউ ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে দেখে থাকে। আমি নিজেও নববর্ষের সময় এখনো মেলা থেকে মাটির পুতুল কিনে দেই শিশুদের, কখনো ধর্ম চলে যাবে বলে মনে হয়নি। ওখানে ধর্ম চলে না গেলে, প্রশ্ন দাঁড়ায় শুরুতে বিতর্ক না থাকলেও কেন মঙল শোভাযাত্রাকে বিতর্কিত করা হলো, এর দায় আসলে কার?
আমার মতে এর দায় যতনা সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর তার চেয়ে অনেক বেশি মুখোশের আড়ালে থাকা স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর, যারা এ ধরণের ইভেন্টকে ব্যাবহার করে রাজনৈতিক আকাঙ্খা বাস্তবায়নে ততপর, অথবা কিছু বিভ্রান্ত মানুষের ইসলামবহির্ভূত কর্মকান্ডকে পুজি করে মুসলিমদের কোন্ঠাসা করতে চায়। ধর্মকে ব্যাবহার করে রাজনীতি বা ব্যাবসা নতুন না, কিন্তু ক্ষুদ্র অংশকে সামনে এনে, ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের সব ধরনের কর্মকাণ্ডকে রাজনৈতিক আখ্যা দেয়া, আর অন্য ধর্মের অনুসারীদেরকে নির্বিঘ্নে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করে ধর্মীয় আচার পালন করতে দিলে স্বাভাবিকভাবেই, সাধারণ মুসলিমদের মনে সন্দেহ বাসা বাধবে। তবে, মঙল শোভাযাত্রা বন্ধ করার দাবি যেমন অযৌক্তিক বা মত প্রকাশের পরিপন্থী, তেমনি কেউ এতে যুক্ত না হলে বা সমালোচনা করলে তাকে সাম্প্রদায়িক বা জংগী ট্যাগ দেয়ার প্রবণতা উদ্দেশ্যেমূলক এবং অনৈতিক, তাতে সাম্প্রদায়িক বিভাজনই ত্বরান্বিত হবে।
আমি মনে করি বাংলাদেশের কৃষি ও কৃষকের প্রাণ নদ-নদী, খাল-বিল, অথচ ব্যাপকভাবে এসব দখল ও দূষণের ফলে কৃষি ও কৃষক যেমন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে, তেমনি সার্বিকভাবে খাদ্য নিরাপত্তা ও প্রকৃতি হুমকির মুখে পড়েছে। প্রকৃতি তথা কৃষির সুরক্ষা ও প্রাণের কল্যাণার্থে জনসচেতনায় পহেলা বৈশাখে আয়োজিত মঙল শোভাযাত্রা একটা কার্যকর উদ্যোগ হতে পারে।