যৌতুকের ১০ লক্ষ টাকা দিতে না পারায় লাশ হয়ে বাড়ী ফিরলো রীমা।
সাইফুল্লাহ নাসির,
আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধিঃ
বিয়ের সাড়ে ৯ মাসের ব্যবধানে যৌতুকের নির্মম বলি হয়ে শনিবার বিকালে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরলো আমতলী পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মন্নান হাওলাদারের কন্যা ইসরাত জাহান রিমা (১৯) ।
ল
গতকাল ৮ই এপ্রিল রাত নয়টার সময়ে রীমার লাশ বহনকারী গাড়ী আমতলীতে পৌঁছে। এ সময়ে এলাকার শোকের পরিবেশ এতটাই ভারী ছিল যে কেহ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি।
গত বছর ১৩ই জুলাই রীমা স্বামীর সাথে ঢাকায় গিয়ে আগারগাঁওয়ের তালতলায় সংসদ ভবন কর্মচারী কোয়ার্টারে থাকতেন। সেই বাসায় স্বামী সাদ্দাম হোসেন সহ শশুর বাড়ির লোকজন ১০ লক্ষ টাকা যৌতুকের জন্য রীমার উপর নির্যাতন চালাতো বলে রীমার পরিবারের দাবী। গত শুক্রবার সকালে রীমা নিজ ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে বলে জানায় শশুর বাড়ির লোকজন। তবে রীমার পরিবারের দাবী যৌতুকের জন্য নির্যাতন করে রীমাকে হত্যার পর লাশ ঝুলিয়ে রেখেছে সাদ্দাম ও তার স্বজনরা।
রীমার পরিবারের লোকজন জানায় রীমার স্বামী সাদ্দাম আমতলী উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের মৃত্যু হানিফ মোল্লার ছেলে।সে ঢাকায় জাতীয় সংসদ ভবনের পরিবহন শাখায় কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকুরী করেন।
রীমার বাবা মন্নান হাওলাদারের অভিযোগ করেন,বিভিন্ন সময়ে স্বামী সাদ্দাম ও তার বাসায় থাকা স্বজনরা রীমাকে প্রায়ই যৌতুকের জন্য নির্যাতন করত। বৃহস্পতিবার বিকেলে স্বামী সাদ্দাম হোসেন রীমার বাবার বাড়ী থেকে ১০ লক্ষ টাকা যৌতুক এনে দিতে বলে। রিমা এতে অপারগতা প্রকাশ করলে ওই দিন বিকেলে এবং রাতে স্বামী সাদ্দাম,শ্বাশুড়ী আয়েশা বেগম ,ননদ আসমা আক্তার ও ননদের স্বামী মাসুদ গাজী রিমাকে ব্যাপক নির্যাতন করে। শুক্রবার দুপুর ১২ টায় রিমা ফ্যানের সাথে গলায় ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে লাশ উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং রিমার বাবাকে আত্মহত্যার খবর জানায়।
রীমার বাবা মান্নান হাওলাদার আরও বলেন,মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে শুক্রবার বিকেলে ঢাকায় পৌছে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার মেয়ের কপালে কাটা দাগ এবং থুতনি এবং গলায় আঘাতে চিহ্ন রয়েছে। আমার মেয়েকে ওরা হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রেখেছে। রিমার ভাই রাব্বি বলেন, আমার বোন আত্মহত্যা করে নাই। ওরা মেরে ঝুলিয়ে রেখেছে। ওদের করা একটা ভিডিও পাওয়া গেছে তাতে দেখা গেছে, আমার বোনের অর্ধেক হাটু খাটের উপর আর গলায় ফ্যানের সাথে ওড়না ঝুলছে। এটা কিভাবে আত্মহত্যা হয়?
রীমার মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে রিমার আমতলী বাসায় চলছে হৃদয় বিদারক দৃশ্য। স্বজন আর রিমার মা রাজিয়া বেগমের আত্ম চিৎকারে আকাশ বাতাশ ভারী হয়ে উঠছে। বার বার মেয়ের নাম নিয়ে মা মুর্ছা যাচ্ছেন। প্রতিবেশীরাও কাঁদছেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত স্বামী সাদ্দাম হোসেন স্ত্রীকে হত্যার কথা অস্বীকার করে বলেন,সে নিজে অভিমান করে আত্মহত্যা করেছে। তার নিকট কোন যৌতুক চাওয়া হয়নি এবং নির্যাতনও করা হয়নি।
এ ব্যাপারে ঢাকার শের-ই বাংলা নগর থানায় স্বামী সাদ্দাম হোসেন, শ্বাশুরী আয়েশা বেগম, ননদ আসমা আক্তার ও তার স্বামী মাসুদ গাজীকে আসামী করে একটি হত্যা প্ররোচনা মামলা দায়ের করা হয়েছে।শের-ই-বাংলা নগর থানার অফিসার ইন চার্জ উৎপল বড়ুয়া বলেন,রিমার লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। মামলা দায়েরের পর আসামীদের প্রাথমিক জিঞ্জাসাবাদ করা হয়েছে। ময়না তদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া গেলে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিয়ের মেহেদি শুকাতে না শুকাতেই যৌতুকের নির্মম শিকার নুসরাত জাহান রিমা হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবী করেছেন আমতলীর এলাকাবাসী।