স্বাস্থ্য ও জীবনযাপন

মোল্লাহাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন অ্যাম্বুলেন্সের বিভিন্ন মূল্যবান যন্ত্রাংশ চুরির অভিযোগ উঠেছে।

মোঃ মিরাজুল শেখ,

জেলা প্রতিনিধি বাগেরহাট :

 

বাগেরহাটের মোল্লাহাটে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে একদিনও চলেনি ৪৫ লাখ টাকার এ অ্যাম্বুলেন্সটি। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় গুরুতর রোগীদের সেবা থেকে বঞ্চিত দেড় বছর ধরে গ্যারেজে পড়ে আছে এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরেকটি সরকারি অ্যাম্বুলেন্স।

 

দফায় দফায় চুরি হলেও, চোর শনাক্ত এবং মালামাল উদ্ধার করতে পারেনি স্বাস্থ্য বিভাগ ও পুলিশ।মোল্লাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন ২০০-৩০০ রোগী চিকিৎসা নেন।

 

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর পাশাপাশি চুরির বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে।

এদিকে প্রতিদিন যত অ্যাম্বুলেন্স প্রয়োজন হয়, তা একটি মাত্র সরকারি অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে মেটে না। এ সুযোগে রোগীর স্বজনদের পকেট কাটছেন বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের চালকরা।

মোল্লাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে মোল্লাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে ঢাকা-১৬২/২ নম্বরের একটি অ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দ হয়েছে বলে জানানো হয়। ১৬ সেপ্টেম্বর তৎকালীন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডাইরেক্টর বরাবর চিঠি দেন। পরে অ্যাম্বুলেন্সটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে মোল্লাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে গ্যারেজে রাখা হয়। চালক না থাকায় অ্যাম্বুলেন্সটি জরাজীর্ণ গ্যারেজে তালাবদ্ধ করে রাখে কর্তৃপক্ষ।

পরের বছরের ২০ জানুয়ারি অ্যাম্বুলেন্সের চারটি চাকা চুরি হয়েছে মর্মে মোল্লাহাট থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন ভারপ্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. রায়হান। তখন জানা যায়, গ্যারেজের শিক ভেঙে চাকাগুলো চুরি হয়েছে। এর এক বছর পর এ বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি অ্যাম্বুলেন্সের পাশের গ্লাস ভাঙা, অ্যাম্বুলেন্সের অক্সিজেন সিলিন্ডার, ফায়ার বক্স সিলিন্ডার, ১২ ভোল্টের একটি ব্যাটারি, মবিল চেম্বারের ঢাকনা চুরি হয়েছে মর্মে সাধারণ ডায়েরি করেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার মো. নাহিদুল ইসলাম। তবে ওই সাধারণ ডায়েরিতে বলা হয়, এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আপাতত মামলা করতে ইচ্ছুক না।

এ অবস্থায় আসলে কখনও কোনো দিন এ অ্যাম্বুলেন্স চালু হবে কিনা, তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।

এছাড়া এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্সের জন্য নির্ধারিত কোনো চালক নেই। আউটসোর্সিংয়ে নিয়োজিত দুজন নৈশ্য প্রহরী থাকলেও ১১ মাস বেতন না পাওয়ায় তারা দায়িত্ব পালন করেন না।

সম্প্রতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতাল ভবনের পেছনে জরাজীর্ণ একটি গ্যারেজের মধ্যে নতুন অ্যাম্বুলেন্স রাখা আছে। গ্যারেজের ছাদের পলেস্তারা খুলে পড়ছে অ্যাম্বুলেন্সের ওপর। গাড়িটির বাম পাশের দরজার গ্লাস ভাঙা। কোনো চাকা নেই গাড়িতে। গাড়ির ভেতরে অক্সিজেন সিলিন্ডার, ফায়ার বক্স সিলিন্ডার, ১২ ভোল্টের একটি ব্যাটারি, মবিল চেম্বারের ঢাকনা নেই। মনে হয়, মালিক ছাড়া কোনো বেওয়ারিশ অ্যাম্বুলেন্স গ্যারেজের মধ্যে ফেলে রাখা, কোনো প্রয়োজন নেই এ গাড়ির।

স্থানীয় নাদিম শেখ বলেন, প্রতিনিয়তই এ হাসপাতাল থেকে রোগীদের বাগেরহাট জেলা হাসপাতাল ও খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। রোগীর স্বজনরা বাধ্য হয়ে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে যান। গ্যারেজে থাকা অ্যাম্বুলেন্সটি সচল ও চালু অ্যাম্বুলেন্সের জন্য স্থায়ী চালক নিয়োগের মাধ্যমে রোগীদের সেবা দেওয়ার দাবি জানাই।

মো. তাওহীদ ভুইয়া নামে এক ব্যক্তি বলেন, একজন রোগীকে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে খুলনা নিতে লাগে ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকা। আর বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে দিতে হয় আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। এ অবস্থায় হাসপাতালের সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালু করা প্রয়োজন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, দেড় বছর ধরে একটি অ্যাম্বুলেন্স চালু করতে পারল না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, এটা এক ধরনের অদক্ষতা। আর হাসপাতালের ভেতর থেকে প্রায়ই চুরি হয়, অথচ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি মামলাও করতে পারে না। তারা কিসের ভয় পায়?

এদিকে এ অ্যাম্বুলেন্সের চাকা ও অন্যান্য মালামাল চুরির পেছনে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের চালক ও ব্যবসায়ীদের হাত থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরে থাকা বেসরকারি আলিফ অ্যাম্বুলেন্সের চালক মেহেদী হাসান বলেন, সরকারি অ্যাম্বুলেন্স সব সময় না পাওয়ায় আমরা রোগী বহন করি। এক সময় হাসপাতালের মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স রাখতে নিষেধ করা হলেও পরে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ম্যাডাম রাখতে বলেছেন।

মোল্লাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোছা. মাহফুজা খাতুনের গাড়িচালক ওবায়দুর রহমান লিটন বলেন, খুব গুরুতর রোগী হলে আমি অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যাই। সব সময় যেতে পারি না। তখন রোগীদের বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে নিতে হয়।

মোল্লাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোছা. মাহফুজা খাতুন বলেন, আমি যোগদানের আগেই অ্যাম্বুলেন্সটির চাকা চুরি হয়, পরে আবার কিছু মালামাল চুরি হয়। আমরা মোল্লাহাট থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি। গ্যারেজটা খুবই নড়বড়ে। আর চাকা না থাকায় অ্যাম্বুলেন্সও সরানো যাচ্ছে না। এছাড়া আমাদের অ্যাম্বুলেন্সচালক ও নৈশ প্রহরী নেই। এসব বিষয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

চুরির বিষয়ে বাগেরহাট জেলা পুলিশের মিডিয়া সেলের প্রধান সমন্বয়কারী এসএম আশরাফুল আলম বলেন, মালামাল চুরি হওয়ার ব্যাপারে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশের অনুসন্ধান চলছে।

বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. মো. জালাল উদ্দিন বলেন, লোকবল সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। আশা করি, দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button