রাজনীতি

শরিক নিয়ে অস্বস্তিতে আওয়ামী লীগ।

নাজমুল শাহাদাৎ জাকির, সাতক্ষীরা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সেই অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর কিংবা ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তফসিল ঘোষণা করা হবে ২০২৩ সালের নভেম্বরে।

জানুয়ারিতে নির্বাচন হলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি এখনো ১০ মাস। এবারের নির্বাচনে সাতক্ষীরার ৪টি আসনেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যেমন শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছে, তেমনি শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছে তাদের শরিক জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদের। ঠিক একইভাবে আসনগুলোতে বিএনপির যেমন শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছে, তেমনি নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতেরও রয়েছে শক্তিশালী প্রার্থী।

বর্তমানে আসন ৪টির সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রকাশ্যে ও গোপনে নিজ নিজ এলাকায় ইতোমধ্যে প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত রয়েছেন। তবে এই মুহূর্তে জেলাবাসীর কাছে সবচেয়ে আলোচ্য বিষয় শরিকদের জন্য সাতক্ষীরার কোন কোন আসন ছাড় দিতে বাধ্য হচ্ছে আওয়ামী লীগ। যদিও মহোজোটের শরিক জাতীয় পার্টি বলছে, এবার এককভাবে নির্বাচন করবেন তারা।

৪ পর্বের ধারাবাহিকতায় আজ প্রথম পর্বে থাকছে সাতক্ষীরার চারটি আসনের সরকার দলীয় সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশী ও দলটির আদ্যপ্রান্ত নিয়ে।

৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত সাতক্ষীরায় ৫টি সংসদীয় আসন ছিল। কিন্তু নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশন ৫টির পরিবর্তে ৪টি আসনে বিন্যস্ত করে। এর ফলে সাতক্ষীরা-১ ও ২ আসন আগের অবস্থানে থাকলেও বাকি ৩টি সংসদীয় আসন দু’টি আসনে পরিণত হয়। সাতক্ষীরা-৩ আসনে আশাশুনি উপজেলার সঙ্গে যুক্ত হয় দেবহাটা উপজেলা ও কালিগঞ্জ উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন। অপরদিকে, কালিগঞ্জ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নকে শ্যামনগর উপজেলার সঙ্গে যুক্ত করে গঠিত হয় সাতক্ষীরা-৪ আসন। পাল্টে যায় ভৌগোলিক অবস্থান ও ভোটের হিসাব-নিকাশ।

বর্তমানে জাতীয় সংসদের ১০৫ (সাতক্ষীরা- ১), ১০৬ (সাতক্ষীরা- ২), ১০৭ (সাতক্ষীরা- ৩) ও ১০৮ (সাতক্ষীরা- ৪) নম্বর আসন নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরার ৪টি আসন।

সাতক্ষীরা-১: জাতীয় সংসদের ১০৫ নম্বর (সাতক্ষীরা-১) আসনটি সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া ও তালা উপজেলা নিয়ে গঠিত। বর্তমানে এ আসনে ভোটার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ লাখ। স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৮৪ সালে সাতক্ষীরা- ১ আসন সৃষ্ট হওয়ার পর থেকে একবারের উপনির্বাচনসহ ৪ বার আওয়ামী লীগ, দু’বার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি, দু’বার বিএনপি, একবার করে জামায়াত এবং জাতীয় পার্টি নির্বাচনে জয় পায়।

ওয়ার্কার্স পার্টির সাংগঠনিক ভিত্তি খুব মজবুত না হলেও টানা দুই মেয়াদে সংসদ সদস্য থাকার কারণে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের একাংশের মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বেশ জনপ্রিয়। এবারও তিনি ১৪ দলের মনোনয়ন নিয়ে অংশ নিতে চান দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। কিন্তু আওয়ামী লীগের অপর একাংশ এবার দলীয় যেকোনো প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে অটল রয়েছেন। আসনটি দলীয়ভাবে ফিরে পেতে চান এখানকার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।

 

সূত্র বলছে, দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশায় এ আসনের তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী মুজিবুর রহমান, সাবেক এমএলএ বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ স.ম আলাউদ্দিনের মেয়ে ও জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক লায়লা পারভীন সেঁজুতি, কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরোজ আহমেদ স্বপন, তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নুরুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা সরদার মুজিবসহ আরও অনেকে। সব মিলিয়ে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে সাতক্ষীরার ৪টি আসনের মধ্যে সাতক্ষীরা-১ আসনে শরিকদের বেশ চাপেই থাকবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

সাতক্ষীরা-২: জাতীয় সংসদের ১০৬ (সাতক্ষীরা- ২) নম্বর আসনটি সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এ উপজেলায় বর্তমান ভোটার সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ। স্বাধীনতার পর ১৯৮৪ সালে আসনটি সৃষ্ট হওয়ার পর আওয়ামী লীগ দুইবার, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি (এরশাদ) একবার ও এককভাবে জাতীয় পার্টি একবার নির্বাচিত হলেও আসনটি মূলত জামায়াতের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিতি। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় থেকে টানা তিন মেয়াদে এ আসনটিতে আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের শরিক দলের প্রার্থী জয়লাভ করলেও মূলত জামায়াতের দুর্গ হিসেবে পরিচিত সাতক্ষীরা- ২ আসন। বিগত সময়ে এই আসনে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের ৫টিতে জয়লাভ করে তারা।

 

বর্তমানে সাতক্ষীরা-২ আসন থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবি দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে জয়লাভ করেন। বর্তমানে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। দুই মেয়াদে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনকালীন বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের জন্য পত্র-পত্রিকায় সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন এই সংসদ সদস্য। তবে এবারও তিনি দলীয় মনোনয়ন নিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চান। এ ছাড়া সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ নজরুল ইসলাম, সহ-সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আবু আহম্মেদ, যুগ্ম-সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ আসাদুজ্জামান বাবু, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এস এম শওকত হোসেনসহ প্রায় ডজনখানেক আওয়ামী লীগের নেতা এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে চান বলে জানা গেছে।

সাতক্ষীরা-৩: জাতীয় সংসদের ১০৭ নম্বর নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা-৩ আসন। এটি কালিগঞ্জ উপজেলার আংশিক এলাকা ও দেবহাটা, আশাশুনি উপজেলা নিয়ে গঠিত। ১৯৮৪ সালে সৃষ্ট এ আসনে বর্তমানে ভোটার সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ। সাতক্ষীরা-৩ আসন তৈরি হওয়ার পর থেকে জাতীয় সংসদ র, একবার করে জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করেছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button