চাষাবাদ ও কৃষি

নাটোরে নবেসুমির স্বেচ্ছাচারিতায় ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের গুড় ব্যবসায়ীরা

 

নাটোর জেলার লালপুর উপজেলার দিলালপুর গ্রামে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের (নবেসুমি) কর্মকর্তাদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন ওই গ্রামের সাধারণ মানুষেরা। নবেসুমি কর্মকর্তারা গ্যাজেট প্রাপ্ত হয়ে ইউএনও, এসিল্যান্ডসহ প্রসাশনিক ক্ষমতা ব্যবহার করে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের আওতাধীন গুড় ব্যবসায়ীদের ৪০ থেকে ৫০ টি পাওয়ার ক্রাসার মেশিন, কাসা জব্দ করার প্রতিবাদে ওই এলাকার প্রায় দেড় হাজারের বেশি মানুষ জমায়েত হয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনটি শনিবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুর ১২টায় দিলালপুর গ্রামে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হক ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে পঠিত বক্তব্য দেন।

 

এ সময় তিনি বলেন, আমি বীর মুক্তিযোদ্ধা। আমি দেশ স্বাধীনের পর থেকে আমার আয়ু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দান করলাম। … আজ আমরা নাটোর জেলার লালপুর উপজেলার বাসিন্দাগণের পক্ষে নিরুপায় হয়ে আপনাদের শরণাপন্ন হয়েছি। এবং তাদের সম্মতি ও উস্থিতিতে তাদের স্বাক্ষরিত লেখা বক্তব্য পাঠ করছি।

নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের অসাধু কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও লালপুর থানা পুলিশ দ্বারা প্রতিনিয়ত মাইক্রো ইন্ডাস্ট্রি বা ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের ব্যবসায়ীরা হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছি। সরকারি কর্মকর্তারা সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে এসে আমাদের মত ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের কর্মীদের মারধর, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে আমাদের আখের কাজের মেশিন গুলো জব্দ তালিকা না দিয়েই লুট করে নিয়ে যায়। নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল কতৃপক্ষের দ্বারা বার বার ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের সাথে জড়িত আমরা ২৫ থেকে ৩০টি গুড় তৈরির কারখানা নির্যাতন, জুলুম ও শোষণের মুখে পরছি। এবার ও তাদের দ্বারা আমরা প্রায় অর্ধকোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছি।

 

আমরা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) নিবন্ধন ও ট্রাকিং আইডি, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশনের (বিএসটিআই) অনুমোদন, স্থানীয় সরকার কর্তৃক ইউনিয়নের ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে আমরা ব্যবসা পরিচালনা করছি। সরকারের ভ্যাট ট্যাক্স পরিশোধ করা সত্ত্বেও কাগজ পত্র না দেখে গত বুধবার ১১ জানুয়ারী ২০২৩ জোরপূর্বক লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীমা সুলতানা ওরফে শাম্মী আক্তার ,লালপুর থানা পুলিশ, নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের কর্মকর্তাসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সুসজ্জিত সন্ত্রাসী বাহিনী আমাদের গুড় তৈরির কারখানায় আখের কাজে ব্যবহৃত মেশিন গুলো জব্দ তালিকা না দিয়েই লুট করে ট্রাকে করে নিয়ে যায়। এছাড়াও আমাদেরকে জিম্মি করে গুড় তৈরির চুলা ভাংচুর ও ঘর থেকে চালের বস্তা বের করে নিয়ে যায়। কেউ কারণ জানতে চাইলে তাঁকেও মারধরসহ পুলিশের গাড়িতে তুলে আটকিয়ে রাখে। এ সময় সবার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীমা সুলতানা ওরফে শাম্মী আক্তার। অন্যদিকে একই অভিযোগ রয়েছে লালপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দেবাশীষ বসাকের বিরুদ্ধে। উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়াই জরিমানা করার বিষয়ে তার নামে একাধিক অভিযোগ ও রয়েছে।

 

আপনারা জাতীর বিবেক। আপনাদের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানাতে চাই যে, নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের কয়েক হাজার একর জমি লীজ দিয়ে আলু, গম, মশুর ডাল চাষ করছেন আর বলছেন কৃষকেরা তাদের আখ সুগার মিলে দিচ্ছে না। চাষীদের কাছ থেকে যেই আখ ১৪০ টাকা করে কেনে, সেই আখ ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের ব্যবসায়ীরা বর্তমান বাজার মুল্যর দরে ২০০ টাকার বেশি দিয়ে কিনে। এতে করে সাধারন আখ চাষীরা ও ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের ব্যবসায়ীরা উভয়েই লাভবান হচ্ছে। কিন্তু এই আখ যখন চাষীরা সুগার মিলে দিচ্ছে তাতে ন্যায্য দাম পাচ্ছে না। কম দামে তাদের দিলেও সঠিক সময়ে টাকা পায়না সাধারণ আখ চাষীরা।

 

আজ ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের ব্যবসায়ী হিসেবে থাকা ৩০ এর বেশি ব্যবসায়ীর কল ও কাসা তাঁরা জোরপূর্বক জব্দ করে নিয়ে গেছে। নাটোরে এভাবে বিভিন্ন এলাকা থেকে ৬০টির বেশি কল ও কাসা জব্দ করেছেন। একেকটা ব্যবসায়ীর সর্বনিম্ন ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল, পুলিশ প্রসাশন ও ম্যাজিস্ট্রেট, এসিল্যান্ডের দ্বারা।

 

আনুমানিক দেড় থেকে ২ কোটি টাকার লোকসানে পড়লাম আমরা। আমাদের ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের ব্যবসা করতে যদি না পারবো, তাহলে, ভ্যাট ট্যাক্স অনুমোদন কেনো দিয়েছেন সরকার?

আপনাদের পত্র-পত্রিকা, টেলিভিশন সহ সকল প্রচার মাধ্যমে এই অন্যায় ও জুলুমের কথা মাননীয় সরকারকে জানাতে চাই। গত ১১ তারিখে ঘটনা ইতিহাসের নিকৃষ্টতম নীল চাষের ঘটনাকে স্মরণ করিয়ে দেয়।

দেশনেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটা কথাই বলবো, পরিবারে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে উদ্যোক্তায় পরিবারকে পরিচিতি দান করতে এবং দেশের উন্নয়নের জন্য আমরা বৈধভাবে আখ ও গুড়ের ব্যবসা করছি। আজ যারা আমাদের এত বড় সর্বনাশ করলো, তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য অনুরোধ করছি। আমরা অবহেলা জুলুম নির্যাতনের শিকার হতে চাইনা। বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে চাই এজন্য আমরা এই সমস্ত নিষ্ঠুর ও ক্ষমতার অপব্যবহারকারী কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

সেই সাথে আমাদের গুড় তৈরির কাজের কল ও কাসা ফেরত দিয়ে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পকে ব্যবসায় এগিয়ে নিতে সকলের সহযোগীতা কামনা করে আজকের এই সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য সমাপ্ত করেছেন।

এই বিষয়ে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের প্রধান কর্মকর্তা আনিসুল আজম জানান, মন্ত্রণালয় থেকে গ্যাজেট আসায় সুগার মিলের পক্ষ থেকে এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে । সুগার মিলের আওতাধীন যেসব ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে ব্যবসা করে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে তাদের ব্যবসা বন্ধে এমন অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা ভ্যাট ট্যাক্স বা ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের সাথে জড়িত কিনা তা সম্পর্কে কিছু বলতে পারবেন না।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button