যশোরে জনসভায় উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি, নৌকায় ভোট চাইলেন প্রধানমন্ত্রী।
যশোরে জনসভায় উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি, নৌকায় ভোট চাইলেন প্রধানমন্ত্রী।
শ্যামল দেবনাথ যশোর
জেলা প্রতিনিধি।
আগামী দিনে আরও উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নৌকায় ভোট চাইলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দেশের অনেক উন্নয়ন করেছি। আপনারা সুযোগ দিলে আগামী দিনে আরও উন্নয়ন করবো। আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। আগামীতে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন কি না ওয়াদা চাই। আপনারা হাত তুলে ওয়াদা করেন।
বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) বিকেলে যশোর শামস উল হুদা স্টেডিয়ামে আওয়ামী লীগের জনসভায় দেওয়া ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর আগমনে স্টেডিয়াম জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
রিজার্ভ নিয়ে সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘রিজার্ভ নিয়ে অনেকে নানা সমালোচনা করছেন। অনেকে প্রশ্ন করেন রিজার্ভ গেল কোথায়? আমরা তো রিজার্ভ অপচয় করিনি। মানুষের কল্যাণে কাজে লাগিয়েছি। জ্বালানি তেল কিনতে হয়েছে, খাদ্যশস্য কিনেছি। বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। করোনার টিকা ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করেছি। এসব কাজে রিজার্ভ থেকে খরচ করতে হয়েছে আমাদের। কারণ আমরা সবসময় মানুষের কথা চিন্তা করে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালাচ্ছি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমাদের সরকার রিজার্ভ রেকর্ড পরিমাণ বাড়িয়েছে। আর কোনো সরকার রিজার্ভ বাড়াতে পারেনি। পর্যাপ্ত রিজার্ভ হাতে রেখেই সব কাজ করছি আমরা। রিজার্ভের কোনো সমস্যা নেই। আমাদের সব ব্যাংকে পর্যাপ্ত টাকা আছে। সামনের দিনেও কোনো সমস্যা হবে না।
কোনো মানুষ ভূমিহীন থাকবে না, ঠিকানাহীন থাকবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি যখন ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসি, তখন থেকে সিদ্ধান্ত নিই একটি মানুষও ভূমিহীন থাকবে না। এবার আমরা ক্ষমতায় এসে ভূমিহীনদের ঘর তৈরি করে দিয়েছি। ৩৫ লাখ মানুষকে ঘর নির্মাণ করে দিয়েছি। ঘর পেয়ে মানুষের জীবন পাল্টে গেছে। জাতির পিতার আকাঙ্ক্ষা পূরণ করেছি।
তিনি বলেন, ‘কারও জমি যেন অনাবাদি না থাকে। প্রত্যেকটা জমি আবাদ করতে হবে। যাতে আমাদের খাদ্য ঘাটতি না হয়। কারও কাছে হাত পাততে না হয়। কারও কাছে চেয়ে চলতে না হয়। যার কাছে যা আছে তা দিয়ে কিছু উৎপাদন করেন।
যশোরে জনসভা করতে পেরে আনন্দিত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই যশোরে আমার নাড়ির টান আছে। এখানকার মাটিতে আমার নানা শেখ জহুরুল হক শুয়ে আছেন। তিনি যশোরে চাকরি করতেন। আমার মায়ের বয়স যখন তিন বছর ছিল তখন তিনি মারা যান। ওই সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা এতই খারাপ ছিল যে লাশ টুঙ্গিপাড়ায় নিয়ে যাওয়া যায়নি। তাই আমার নানাকে এখানে দাফন করা হয়েছে। এখানে আমার নানার স্মরণে দারিদ্র্য বিমোচন ট্রেনিং সেন্টার হচ্ছে।
মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়ে বিএনপি নিজেদের উন্নয়ন করেছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘রক্ত আর হত্যা ছাড়া বিএনপি আর কিছু দিতে পারেনি। তারা (বিএনপি) কিছুই দিতে পারে না, শুধু পারে মানুষের রক্ত চুষে খেতে। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।
তিনি বলেন, ‘বিচার পাওয়ার অধিকার আমার ছিল না। বাবা-মা-ভাই-বোন সবাইকে হারিয়েছি। তারপরও এ বাংলায় ফিরে এসেছি। বাংলার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করাই ছিল আমার লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর জয় বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ ছিল। একের পর এক (অভ্যুত্থান) হয়েছে। এর সঙ্গে জিয়া-মোশতাক সবাই জড়িত। জিয়া-মোশতাক সবাই খুনি। আমি বিচার চাইতে পারিনি। তারপরও সবকিছু মাথায় নিয়ে ফিরে এসেছি একটাই কারণে, এই জাতির পিতা, আমার পিতা সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন। সেজন্য আমার লক্ষ্য ছিল, এই দেশের মানুষের জন্য কিছু করা। বারবার ক্ষমতায় এসেছি বলেই উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে কমিউনিটি ক্লিনিক করেছে। বিনা পয়সায় ৩০ ধরনের ওষুধ পাওয়া যায়। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি। বিএনপি দিয়েছে অস্ত্র, খুন, হত্যা। শুধু হত্যা আর খুন ছাড়া কিছু দিতে পারেনি বিএনপি। মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। জিয়া যখন মারা যায়, কিছু রেখে যায়নি। ভাঙা বাক্স আর ছেঁড়া গেঞ্জি ছাড়া।