আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ হতে পারে গণতন্ত্র ও সুশাসন
কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি নিয়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র সন্তোষ প্রকাশ করেছে। এর ধারাবাহিকতায় পরের ৫০ বছরে এ অংশীদারত্বকে আরও জোরদারের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে দুই দেশ। কিন্তু দুই দেশের সম্পর্ককে পরের ধাপে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে র্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞা একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ূন কবীরের মতে, ভবিষ্যতে গণতন্ত্র ও সুশাসনের মতো বিষয়গুলো ওয়াশিংটনের সঙ্গে ঢাকার সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার পথে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।মূলত গত সপ্তাহে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নানা পর্যায়ের আলোচনার পর দুই দেশের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে জানতে চাইলে এ অভিমত দেন হুমায়ূন কবীর।
৪ এপ্রিল ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বৈঠক করেন। ৬ এপ্রিল বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাবিষয়ক মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি বনি জেনকিন্সের নেতৃত্বে দুই দেশের নিরাপত্তা সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
এ ছাড়া আব্দুল মোমেন ওয়াশিংটন সফরকালে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটের বেশ কয়েক সদস্যের সঙ্গে আলোচনা করেন। অন্যদিকে মাসুদ বিন মোমেন মার্কিন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েন্ডি শারমেন ও হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের জ্যেষ্ঠ পরিচালক সুমনা গুহ রায়ের সঙ্গে বৈঠক করেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ দেশটির নানা পর্যায়ের কর্মকর্তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অংশীদারত্ব এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশে মানবাধিকার, আইনের শাসন ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর জোর দিয়েছেন।
পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন দেশে ফিরে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন যাতে ভালো হয়, এ বিষয় তাঁর সঙ্গে বৈঠকে তুলেছেন ওয়েন্ডি শারমেন।
সম্পর্কের পরের ৫০ বছর
দুই দেশের সম্পর্কের পরের ৫০ বছর সম্পর্কে জানতে চাইলে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবীর বলেন, বাংলাদেশকে নিজের স্বার্থেই অংশগ্রহণমূলক সমাজ গঠনে মনোযোহুমায়ূন কবীর বলেন, ‘মনে রাখতে হবে, যুক্তরাষ্ট্রের মতো বন্ধুদেশগুলো প্রাথমিকভাবে আমাদের একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায়। এ জন্য তারা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর গণতান্ত্রিক বিকাশে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে।’
হুমায়ূন কবীরের মতে, অর্থনৈতিক উত্তরণের পর বাংলাদেশ যখন প্রতিযোগিতামূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক বাজারে প্রবেশের জন্য যাবে, তখন এ দেশের ভাবমূর্তির প্রসঙ্গটি সামনে আসবে। তখন যদি গণতান্ত্রিক চর্চার দিকটি যথাযথ না হয়, তাহলে বিনিয়োগসহ নানা ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে পারে।
চ্যালেঞ্জ গণতন্ত্রে
গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (বিইআই) প্রেসিডেন্ট হুমায়ূন কবীরের মতে, র্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে সম্পর্কের জন্য যতটা চ্যালেঞ্জ মনে করা হচ্ছে, বাস্তবে তা হবে না। চ্যালেঞ্জ হবে গণতন্ত্রের বিষয়টি।
কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে হুমায়ূন কবীর বলেন, আগে মার্কিন প্রশাসনের বৈশ্বিকনীতিতে অগ্রাধিকারে ছিল সন্ত্রাসবাদ দমন। জো বাইডেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর এ নীতিতে পরিবর্তন এসেছে। নতুন মার্কিন প্রশাসনের বৈশ্বিকনীতির প্রধান অগ্রাধিকার গণতন্ত্র।
হুমায়ূন কবীর বলেন, র্যাবের প্রতিষ্ঠার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র প্রশিক্ষণের পাশাপাশি কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা দিয়ে নানাভাবে সমর্থন যুগিয়ে গেছে। কিন্তু গত ডিসেম্বরে দেওয়া নিষেধাজ্ঞার কারণে এসব সহযোগিতা বন্ধ হয়ে যাবে।