জাতীয়

যুদ্ধ এবং বাংলাদেশের জন্ম

জাতীয় মুক্তির এই উপাখ্যানের ভেতরে ছিল আরও বহু বিষয়। যেমন বিশেষ বিশেষ সম্প্রদায়কে বিপদে ফেলা (নারী, হিন্দু ও ক্ষুদ্র জাতিসত্তা), স্থানীয় প্রতিহিংসা বা ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটানো; ছিল বিভিন্ন বর্ণের জাতীয়তাবাদীদের মধ্যে বিরাজমান উত্তেজনা, সহিংসতা ও ধ্বংসের ঘটনা, মানুষের বাস্তুচ্যুতি এবং ব্যক্তিগত সাহস ও উৎসর্গের হাজারো কাহিনি। একইভাবে যে বিষয়টি সমান গুরুত্ব দিয়ে মনে রাখা জরুরি, তা হলো যুদ্ধটা ছিল দুটি বড় ভূরাজনৈতিক খেলার একটা অংশ: ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং স্নায়ুযুদ্ধকালীন ক্ষমতাধর দেশগুলোর ভেতর লড়াই।

১৯৭১ সালজুড়েই বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমগুলোয় এই দ্বন্দ্বের কথা উঠে এসেছে। এতে করে বাংলাদেশ তখন সারা বিশ্বের ঘরে ঘরে উচ্চারিত নাম হয়ে উঠেছিল। এর আগে কখনো বাংলা নামের এই বদ্বীপ আন্তর্জাতিক মহলের মনোযোগ এভাবে পায়নি।

সশস্ত্র সংগ্রাম

বিশ শতকে এই বদ্বীপকে যে তিনটি প্রচণ্ড ধাক্কা সামলাতে হয়েছে, তার একটি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ। ১৯৪৩ সালের ভয়ংকর দুর্ভিক্ষ এবং ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর এবার সশস্ত্র সংগ্রাম গ্রাস করে নিল তাকে। যুদ্ধের গল্প বলা সহজ নয়। কারণ, একই সময়ে ঘটছিল অজস্র ঘটনা। আর এ ঘটনাগুলো নিয়ে এখনো তীব্র বাদানুবাদ চলে। আসলে ১৯৭১ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কী ঘটেছিল, সে সম্পর্কে অনেক কিছু লেখা হয়েছে। এসব লেখার উৎস পত্রপত্রিকার প্রতিবেদন, প্রচারণা কিংবা ভুক্তভোগীদের দিনলিপি, সামরিক বা রাজনৈতিক স্মৃতিকথা। গবেষণা প্রবন্ধ, সৃষ্টিশীল লেখা, সিনেমা বা অনুসন্ধান কমিশনের প্রতিবেদনও যুক্ত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক লেখালেখিতে। এ থেকে যে গল্পের সৃষ্টি, তা বহুস্তরবিশিষ্ট। তবে যা কিছুই লেখা হয়েছে একটি সশস্ত্র সংগ্রামকে কেন্দ্র করে। এই সংগ্রামের এক দিকে ছিল পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী, অন্য দিকে পূর্ব বাংলার জাতীয়তাবাদীরা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button