জাতীয়

যে দেশে ন্যায্যমূল্যের কার্ড নিতে টাকা দিতে হয়

সুখবর আছে অনেকগুলো। বাংলাদেশ শতভাগ বিদ্যুতের দেশ হয়ে গেছে, বিচ্ছিন্ন চরেও পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ। ওয়ালটনের মতো কোম্পানিগুলোর ফ্রিজ বিক্রি হচ্ছে প্রত্যন্ত গ্রামে-গঞ্জে। সুখী দেশের বিশ্বতালিকায় বাংলাদেশ এগিয়েছে ৭ ভাগ, ১০১ থেকে এসেছে ৯৪-তে। প্রবাসী আয়ের গতিবৃদ্ধি হয়েছে মার্চ মাসে। এ হার অব্যাহত থাকলে মার্চে প্রবাসী আয় ছাড়িয়ে যাবে ২০০ কোটি ডলার। পাশাপাশি আছে মন খারাপ করা খবরও। আগের বছরের মতো ২০২১ সালেও বাংলাদেশ পৃথিবীর ১ নম্বর বায়ুদূষণের দেশ হিসেবে গণ্য হয়েছে। বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে চলে গেছে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে, এ খবর বেশ পুরোনো।

 

প্রথম আলোর খবর: ডাল-তেলের ব্যাগটা পাশে রেখে মাটিতে বসে হাঁপাচ্ছিলেন আজিমুন্নেসা। তপ্ত দুপুরের কড়া রোদে লম্বা লাইনের ধকলে হাঁটার শক্তি নেই তাঁর। ষাটোর্ধ্ব আজিমুন্নেসা যেখানে বসে ছিলেন, সেখান থেকে কয়েক হাত দূরে খুলনা নগরের শশীভূষণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক।…

আজিমুন্নেসা রোববার সকাল ৯টায় সেখানে এসেছেন। পণ্য দেওয়া শুরু হয়েছে দুপুর ১২টায়। এরপর ঘণ্টা দেড়েক পর হাতে পেয়েছেন কাঙ্ক্ষিত পণ্য। আজিমুন্নেসা জানালেন, রোদে লাইনে দাঁড়িয়ে সবাই ক্লান্ত। পাঁচজন পুরুষ, তারপর সাতজন নারী, আবার পুরুষ এভাবে লাইন এগোচ্ছে। তবে কম দামে পণ্য পেয়েও খুব বেশি খুশি হতে পারেননি আজিমুন্নেসা। তিনি বললেন, ‘এত কষ্ট কইরে যেসব মাল পালাম তাতে ভালো হুয়েছে; তবে সঙ্গে কডা চাল দিলি খাইয়ে বাঁচতাম।’ (২০ মার্চ ২০২২)

 

পাশাপাশি এ খবরটাও আপনাদের জানিয়ে রাখি, চালসহ খাদ্যশস্য মজুত এখন বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি। খাদ্যনিরাপত্তার দিক থেকে দুর্ভাবনা নেই। দেশে এখন খাদ্য মজুত আছে ২০ লাখ টনের বেশি। চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে। টিসিবিতে কম দামে নিত্যপণ্য বিক্রি করার পাশাপাশি ওএমএস কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে, এখন শুরু হয়েছে এক কোটি মানুষকে ন্যায্যমূল্যে কার্ডের মাধ্যমে নিত্যপণ্য বিক্রির মহাকর্মসূচি। করোনার সময় মুঠোফোনের মাধ্যমে আড়াই হাজার টাকা পাঠানো হয়েছিল দুই দফায়, ৫০ লাখ টার্গেট করে প্রায় ৩৮ লাখ মানুষকে টাকা পাঠানো গিয়েছিল, সেই ডেটা ব্যবহার করা হবে। আরও নতুন ৬০ লক্ষাধিক মানুষকে কার্ড দেওয়া হচ্ছে। এ কার্ডধারীরা ডিলারের দোকান থেকে দুই দফায় ভর্তুকি দেওয়া দামে তেল, চিনি, ডাল ও পেঁয়াজ পাবেন।

বঙ্গবন্ধু বলে গিয়েছিলেন, ‘অন্যান্য দেশ পায় সোনার খনি, আমি পেয়েছি…খনি।’ শূন্যস্থান আমি আর পূরণ করলাম না। ৫০ লাখ মানুষকে মুঠোফোনে টাকা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়ে ৩৮ লাখকে দিতে পারা গিয়েছিল, বাকি বরাদ্দ টাকা ফেরত গিয়েছিল, কারণ বাকি নম্বরগুলো ছিল ভুয়া, একই নম্বর নানাজনের নামে দেওয়া তালিকায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এখন প্রথম আলোর ২৩ মার্চের প্রথম পাতার খবর, ‘কার্ড নিতে দিতে হলো টাকা’। ঘটনা গঙ্গাচড়ার কোলকোন্দ ইউনিয়নে। আমার সোনার দেশের চেয়ারম্যান-মেম্বাররা শতভাগ সৎ, বুক ফুলিয়ে এ কথা বলতে পারলে দুর্নীতির তালিকায় বাংলাদেশের নাম কোনো দিনও আসত না।

 

সরকার যে নিত্যপণ্যের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনার জন্য উদ্যোগী হয়েছে, তা তো দেখাই যাচ্ছে। বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে, জেলায় জেলায় খাবারের প্যাকেট বানানো হচ্ছে। তা যাচ্ছে উপজেলায়, উপজেলা থেকে ইউনিয়নে, সেখানে ডিলারের মাধ্যমে একটা থেকে তিনটা কেন্দ্র থেকে চলছে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি। বাংলাদেশে সেফটি নেট আছে। খাদ্যশস্যের মজুত ভালো। তারপরও এ পরিস্থিতি হলো কেন?

তথ্যসুত্রঃ প্রথম আলো/২৫ মার্চ ২০২২

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button