জাতীয়

যাচ্ছিলেন ব্যবসার কাজে, পথে টিসিবির ট্রাক দেখেই দাঁড়ালেন লাইনে

আতর-টুপি বেচে কোনোরকমে সংসার চলে আনোয়ার হোসাইনের। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পকেটে এক হাজার টাকা নিয়ে পাইকারি দরে আতর-টুপি কিনতে হেঁটে রাজধানীর গোলাপবাগের বাসা থেকে গুলিস্তান যাচ্ছিলেন। পথে মতিঝিলের হাটখোলায় সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজের সামনে টিসিবির ট্রাক দেখে থেমে যান সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য কিনতে।

 

পণ্য কেনার লাইনে দাঁড়িয়ে আনোয়ার বললেন, ‘লাইন ছোট দেখলাম, তেল-ডালের জন্য দাঁড়াইয়া গেলাম।’

 

পঞ্চাশোর্ধ্ব আনোয়ার হোসাইনের পরিবার পাঁচ সদস্যের। আগে গুলিস্তানের ফুটপাতে তিনি জুতা বিক্রি করতেন। করোনার সময় এই ব্যবসা ছাড়তে বাধ্য হন। উল্টো সংসারের খরচ জোগাতে আড়াই লাখ টাকার মতো ধারদেনা হয়ে যায় তাঁর। এর মধ্যে পাইলসের সমস্যা ধরা পড়ে তাঁর। বছরখানেক ঠিকমতো কাজই করতে পারেননি।

আনোয়ার হোসাইন জানান, তাঁর পরিবার সবশেষ গরুর মাংস খেয়েছে গত কোরবানির ঈদে। বাচ্চারা গরুর মাংস খেতে চায়। কিন্তু চাইলেই তো আর সবআনোয়ারের মতো আড়াই শ জন গতকাল টিসিবির গাড়ি থেকে পণ্য কিনেছেন। সেখানে ট্রাক এসে পৌঁছায় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে। বিক্রি শেষ হয় সন্ধ্যা সাতটায়। তখনো পুরুষদের লাইনে অপেক্ষায় ছিলেন ছয়জন, নারীদের লাইনে সাতজন। খালি হাতে ফেরত যাওয়া নারীদের মধ্যে ছিলেন মায়া জাহাঙ্গীর। তিনি বলেন, গরম, ধাক্কাধাক্কির মধ্যে ছয় ঘণ্টা বেশি দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁর আক্ষেপ, ‘অল্পের জন্য পেলাম না। আরেক দিন দাঁড়াইতে হইবে।’

মায়া জাহাঙ্গীরের দাবি, দুপুর ১২টার দিকে প্রথমে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু কড়া রোদের কারণে একবার লাইন ছেড়ে ছায়ায় যান। এ সময় অন্য নারীরা তাঁকে লাইনের আগের জায়গায় আর ঢুকতে দেননি। লাইনের একেবারে শেষে গিয়ে দাঁড়াতে হয় তাঁকে। তিনি জানান, স্বামীর দারোয়ানের কাজ করে বেতন পায় মাসে ৮ হাজার টাকা। তাঁর এক ছেলে টুকটাক কাজ করে কিছু আয় করে। কোনো রকমে সংসার চলে।

 

টিসিবির এই লাইনে চার ঘণ্টা দাঁড়িয়ে পণ্য হাতে পান গৃহিণী জরিনা বেগম। তারপরও তিনি কাঁদছিলেন। পরে নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে বললেন, ‘পেঁয়াজ অর্ধেকই পচা। দেড় শ টাকাই লস।’

 

হাটখোলায় টিসিবির পরিবেশক মেহেদী এন্টারপ্রাইজের বিক্রয় প্রতিনিধি সোহেল রানা বলেন, মাঝে তিন দিন (গত বৃহস্পতিবার, শুক্রবার ও শনিবার) সরকারি বন্ধ থাকায় গুদামে পড়েছিল পেঁয়াজ। বস্তার ভেতর থাকায় পেঁয়াজ কিছুটা নষ্ট হয়ে গেছে। টিসিবি থেকে এগুলোই দিয়েছে। হয় না!

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button