ধর্ম ও দর্শন

রিজিকদাতা তো আল্লাহ, তাহলে প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষ না খেয়ে থাকছে কেন? 

রিজিকদাতা তো আল্লাহ, তাহলে প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষ না খেয়ে থাকছে কেন?

দু’টি কারণে।

 

১. আল্লাহ রিজিকদাতা- এর অর্থ এই নয় যে, আল্লাহ খাদ্য রান্না করে মানুষের মুখে মুখে তুলে দিয়ে যাবেন। বস্তুত খাবারের যাবতীয় উপাদান তিনি প্রকৃতিতে দিয়ে রেখেছেন। এখন মানুষকেই অনুসন্ধান করে খাবার যোগাড় করতে হবে।

 

‘’ভূপৃষ্ঠে বিচরণশীল যত প্রাণী রয়েছে সবার রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহর।’’ (হুদ ০৬) খেয়াল করুন, আল্লাহ কিন্তু সকল প্রাণীর কথা বলেন নাই, বলেছেন কেবল ‘বিচরণশীল’ প্রাণীর কথা, অর্থাৎ যারা রিজিকের তালাশ করবে, অনুসন্ধান চালাবে তাদেরকে তিনি রেজেক দান করবেন।

.

তিনি আরো বলেন, হে মোমেনগণ। জুমআর দিনে যখন সালাতের জন্য আযান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে ত্বরা কর এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ। অতঃপর সালাত সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সুরা জুমা ৯/১০)

.

সুতরাং অলসতা করে কেউ ঘরে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে তার জন্য আর যাই হোক আসমান থেকে খাদ্য নাজিল হবে না। এখানে আল্লাহকে দোষারোপ করা নিতান্তই মুর্খতা।

.

২. স্বভাবতই এখন যে প্রশ্নটা আসবে তা হচ্ছে- এই যে আজকে পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ ক্ষুধার্ত থাকছে, মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষে মারা যাচ্ছে, আড়াই কেজি চালের বিনিময়ে সন্তানকে বিক্রি করে দিচ্ছে, তারা কি খাদ্যের তালাশ করে না? অবশ্যই করে, তবু প্রতিদিন এক বিলিয়ন মানুষকে পেটের ক্ষুধা পেটে রেখে ঘুমাতে হয়। তাহলে তাদের রিজিকের ব্যবস্থা হচ্ছে না কেন?

.

এর জবাব হচ্ছে- মানুষ খাদ্যের তালাশ করছে ঠিকই, খাদ্য উৎপাদনও হচ্ছে যথেষ্টই, কিন্তু মানুষই মানুষকে না খাইয়ে রাখছে। দোষটা মানুষের, আল্লাহর নয়।

.

আল্লাহ শেখালেন (কল্যাণকর কাজে) ব্যয় করতে, খরচ করতে, সম্পদ স্তুপিকৃত করে না রাখতে, দান করতে। কিন্তু আমরা পুঁজিবাদী হই, আমরা জমা করি, সঞ্চয় করি। সম্পদের পাহাড় বানাই। ফলে ৪০০ কোটি মানুষের সম্পদ জমা হয় মাত্র ৮ জন মানুষের হাতে।

.

এই অর্থনৈতিক অবিচারসহ যাবতীয় অন্যায়, অবিচার ও বঞ্চনা থেকে মানবজাতিকে মুক্তি দেবার উদ্দেশ্যেই আল্লাহ যুগে যুগে নবী-রসুল পাঠাতেন। শেষ নবীও সেই মুক্তির পথনির্দেশ নিয়েই ধরাপৃষ্ঠে আবির্ভুত হয়েছিলেন।

ইসলামের শিক্ষা হচ্ছে- ‘‘যদি কারো বাড়ির আশেপাশে চল্লিশ ঘর পর্যন্ত কেউ ক্ষুধার্ত থাকে আর ঐ ব্যক্তি পেট পুরে খেয়ে ঘুমুতে যায় তাহলে ঐ ব্যক্তি মো’মেন নয়।’’

.

এই দীক্ষা গ্রহণ করার ফলে এককালে কেমন অর্থনৈতিক সুবিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা আজও ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ আছে। মানুষের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, যাকাত গ্রহণ করার মত লোক খুঁজে পাওয়া যেত না।

.

ওই পথ-নির্দেশ মোতাবেক চললে আজও তেমনই অর্থনৈতিক সুবিচার প্রতিষ্ঠিত হবে তাতে সন্দেহ নেই। অর্থাৎ আল্লাহর দেওয়া রেজেক আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে সুষমভাবে বণ্টিত হবে। কিন্তু যেহেতু সেই পথনির্দেশকে আমরা পরিত্যাগ করেছি, নিজেদের চলার পথ নিজেরাই রচনা করে নিয়েছি, সুতরাং আজকের এই অর্থনৈতিক অবিচার, এই ক্ষুধা-দরিদ্রতা-শোষণের জন্য আসলে আমরা নিজেরাই দায়ী।

.

এর চেয়ে নির্বুদ্ধিতা আর কী হতে পারে যে, আমরা একদিকে আল্লাহর দেখানো পথনির্দেশ পরিত্যাগ করছি, অন্যদিকে আল্লাহকে দোষারোপ করছি কেন তিনি কোটি কোটি মানুষকে ক্ষুধার্ত থাকতে দিচ্ছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button